বৃহস্পতিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

মৃত্যু এখানে

মৃত্যু এখানে মাঝরাস্তায় হাঁটে;
প্রাতঃভ্রমনের নিয়মিত আয়োজনে
মৃত্যু এখানে বুটজুতো পরে ছোটে।
মৃত্যু এখানে শপিং মলের ভীড়ে
রঙীন ফতুয়া দরদাম করে কেনে;
মৃত্যু এখানে বারো টাকা ভাড়া পেলে
নিয়ে যাবে ঠিক অলিগলি চিনে চিনে।
মৃত্যু এখানে কলিং বেলের সুরে
পরিচিত কোন মুখ হয়ে ভেসে ওঠে;
মৃত্যু এখানে আধোঘুম জাগরনে
স্কুলের ব্যাগের বোঝা তুলে নেয় পিঠে।
মৃত্যু এখানে অফিস ফিরতি বাসে
ক্লান্ত লাইনে অপেক্ষমান ছায়া;
মৃত্যু এখানে দূরবাসী ছাত্রীর
চোখের জলে বাবার জন্য মায়া।

শুক্রবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

একুশ বলছে

একুশে ফেব্রুয়ারী দিনটি গুরুত্বপুর্ণ তো বটেই তবে আরো গুরুত্বপুর্ণ একুশে ফেব্রুয়ারী যে বার্তাটি পৌছায় আমাদের কাছে সেটি। সেই বার্তাটি একুশ ছাড়িয়ে ঢুকে পড়ে আমাদের প্রতিদিনের যাপিত জীবনে। একুশ প্রথমত বলে যে ভাষা খুব জরুরী, নিজের ভাষা, মাতৃভাষা। কতটা জরুরী সেটা একুশ খুব স্পষ্ট করে দেয়, বলে ততটাই জরুরী যতটা কিনা জরুরী আমার প্রান ধারনের ইচ্ছা। একুশ দেখায় সবাই আবার এরকমই যে ভাবে তাও নয়। এই মতের বিরোধীরাও আছে আর তাদের শক্তিও কম নয়। তাই একুশ বলে যে সতর্কতায় কমতি দেয়া যাবে না, ভাষাটাকে আগলে রাখা চাই, চর্চা দিয়ে, শিক্ষা আর প্রয়োগের শুদ্ধতা দিয়ে।

একুশ জানিয়ে দিয়েছে ভাষা আমার অধিকার, তবে এখানেই শেষ নয়, এই অধিকার পূর্ণতা পাবে না যদি না আমি আমার দায়িত্বটুকুও বুঝে নেই। আমার এই দায়িত্বের প্রকাশ ঘটবে আমার ভাষার সব প্রয়োগে, তা সে কথা বলাতেই হোক আর এমএসএন মেসেঞ্জারে চ্যাট করার সময় হোক। আমি এই দায়িত্বের প্রকাশ খুঁজবো প্রিয় লেখকের নতুন উপন্যাসে, দৈনিকের লঞ্চডুবির মন খারাপ করা খবরে, নেশা লাগানো টিভি নাটকের সংলাপে এমনকি এফ এম রেডিওর অনুরোধের আসরে।

বোঝা যাচ্ছে কাজটা সহজ নয়। ভাষার কোন প্রয়োগ শুদ্ধতার সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে জল ঘোলা করার ইচ্ছা আমাদের পথিকৃতদের কেউ কেউ যে একেবারেই রাখেন না এমন বলা শক্ত। এসব সীমানা প্রাচীর একেবারেই তুলে দেওয়ার পক্ষেও মত রাখেন অনেকে। আর তখনি একুশের বার্তা জানিয়ে দেয় যে দ্বন্দ্ব শেষ হয়ে যায়নি, আরো বদল বাকি।
একুশের বইমেলায় কোন কোন বই চোখের সামনে মেলে ধরে বুক কেঁপে ওঠে, যেমনটা হয় নতুন কোন রেডিও চ্যানেলের উপস্থাপনা আচমকা শুনে ফেললে। একজন নতুন লেখক, যিনি চমৎকার প্রচ্ছদে, প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা থেকে ছেপে এনেছেন তাঁর প্রথম বই, তাকে উৎসাহ দিয়ে প্রথম দু পরিচ্ছেদে চোখ বুলিয়ে মনে হয় লেখার আগে খুব একটা পড়া হয়ে ওঠেনি তার। ভাষার ওপর দখলের ঘাটতি মেনে নেয়ার চেষ্টাকে আরো কষ্টসাধ্য করে তোলে লেখকের হাতের নাগালে কোন বানান অভিধান না থাকার বেদনা।

পৌনঃপুনিকতার জালে আটকে পড়া জনপ্রিয় লেখকেরা পুস্তকপন্যের কাটতি বাড়িয়ে কিছু পাঠক ধরে রেখে ভাষার দায় কিছুটা যে মেটান না তা নয়। তবে আমরা সবাই সেই সুদিনের অপেক্ষায় আছি যখন তাদের ভাঁড়ারে অর্থস্রোতের বিপরীতে কিছু সাহিত্যবস্তু তাদের পুস্তকপন্যের পাতায় শোভা পাবে।

এতকিছুর পরও আমরা কিন্তু জিতে আছি। একুশ শুধু বলে আলোটাকে উঁচু করে ধরতে, যাতে প্রান্তে যারা আছে তারা মিছিলে সামিল হতে পারে। ভাষা আমাদের বুকের ভেতরই আছে, শুধু তাকে নিয়ে আসতে হবে ঠোঁটের ডগায়, কলমের মাথায় আর কিবোর্ডের বোতামে।